search here

ভারতের পবিত্র ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ এর নাম ও অবস্থান



ভারতের পবিত্র ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ এর নাম ও অবস্থান -



১. সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ-

সোমনাথ শব্দটির অর্থ “চন্দ্র দেবতার রক্ষাকর্তা”। সোমনাথ মন্দিরটি ‘চিরন্তন পীঠ’ নামে পরিচিত।  গুজরাট রাজ্যের সৌরাষ্ট এর নিকট প্রভাস ক্ষেত্রে অবস্থিত এই মন্দির অন্যতম উল্লেখযোগ্য জ্যোতির্লিঙ্গ নামে সারা ভারতে পরিচিত । সারা বিশ্ব ও ভারত জুড়ে অসংখ্য পুণ্যার্থী ও ভক্ত আসেন এই জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন ও পূজা নিবেদন করতে। অতীতে এই শিব মন্দির বারবার বিদেশী শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয়। প্রায় পাঁচবার বা তার বেশিবার এই মন্দির পুনর্নির্মিত  করা হয়।

২. মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ-

দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের শ্রীশৈলমে অবস্থিত মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ এক প্রসিদ্ধ শিব মন্দির।মন্দিরটি পূর্বমুখী। কেন্দ্রীয় মণ্ডপে অনেকগুলি স্তম্ভ এবং নন্দীকেশ্বরের একটি বিরাট মূর্তি আছে।দক্ষিণ ভারতের সকল হিন্দুদের কাছে এই মন্দির অনেক পবিত্র।সারা বছর ধরে এখানে অনেক অনেক ভক্ত আসেন নিজের মনস্কামনা পূর্ন করতে ও বাবা শিবের লিঙ্গে জল অর্পণ করতে।শিবরাত্রি এই মন্দিরের প্রধান উৎসব।

৩. মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ-

মধ্য প্রদেশের মধ্যে অবস্থিত  মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ অন্যতম শিব মন্দির।এখানে সারা বছর অসংখ্য পুণ্যার্থী আসেন এই মন্দিরে পূজা দিতে।এটিই একমাত্র দক্ষিণমুখী মন্দির। মহাকালেশ্বরের মূর্তিটি  ‘দক্ষিণামূর্তি’।এই শব্দের অর্থ ‘যাঁর মুখ দক্ষিণ দিকে’। এই মূর্তির বিশেষত্ব এই যে” তান্ত্রিক শিবনেত্র “প্রথাটি বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একমাত্র মহাকালেশ্বর মন্দিরে দেখা যায়। ‘ওঙ্কারেশ্বর মহাদেবে’র মূর্তিটি মহাকাল মন্দিরের গর্ভগৃহের উপরে স্থাপিত। গর্ভগৃহের পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দিকে যথাক্রমে গনেশ, পার্বতী ও কার্তিকের মূর্তি স্থাপিত আছে।  দক্ষিণ দিকে শিবের বাহন  নন্দীর মূর্তি স্থাপিত আছে।। মন্দিরের তৃতীয় তলে  নাগচন্দ্রেশ্বর মূর্তি আছে। এটি একমাত্র  নাগ পঞ্চমীর দিন দর্শনের জন্য খুলে দেওয়া হয়। মন্দিরের পাঁচটি তল আছে। তার মধ্যে একটি ভূগর্ভে অবস্থিত। এছাড়া মন্দিরে একটি বিশাল প্রাঙ্গন রয়েছে। হ্রদের দিকে অবস্থিত এই প্রাঙ্গনটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। মন্দিরের শিখর বা চূড়াটি শাস্ত্রে উল্লিখিত পবিত্র বস্ত্র দ্বারা ঢাকা থাকে। ভূগর্ভস্থ কক্ষটির পথটি পিতলের প্রদীপ দ্বারা আলোকিত হয়। মনে করা হয়, দেবতাকে এই কক্ষেই প্রসাদ দেওয়া হয়। এটি মন্দিরের একটি স্বতন্ত্র প্রথা। কারণ, এই রকম প্রথা অন্য কোনো মন্দিরে দেখা যায় নামন্দিরের গর্ভগৃহে যেখানে শিবলিঙ্গটি রয়েছে সেখানে সিলিং-এ একটি  শ্রীযন্ত্র উলটো করে ঝোলানো থাকে।

৪. ওঙ্কারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ-

মধ্যপ্রদেশের নর্মদা নদীর একটি দ্বীপে ওঙ্কারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ ও মামল্লেশ্বর মন্দির অবস্থিত।মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর স্টেশন থেকে ৭৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ পাঁচতলা মন্দিরের গর্ভগৃহে ছোট্ট শিবলিঙ্গ৷ সামান্য উচ্চতা৷ জাতিধর্ম নির্বিশেষে স্পর্শ করে পূজো দেওয়া যায়৷ সারা বছর ধরেই অনেক পুণ্যার্থী আসেন পূজা দিতে।

৫. কেদারনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ-

চারধামের অন্যতম কেদারনাথ।এটি ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের গাড়োয়াল হিমালয় পর্বতশ্রেণীতে অবস্থিত।এটি একটি মন্দির শহর ও বটে। এটি  মন্দাকিনী নদীর তীরে স্থাপিত ।এখানকার তীব্র শীতের জন্য মন্দিরটি কেবল এপ্রিল মাসের শেষ থেকে কার্তিক পূর্ণিমা অবধি খোলা থাকে। শীতকালে কেদারনাথ মন্দিরের মূর্তিগুলিকে ছয় মাসের জন্য  উখি মঠে নিয়ে গিয়ে পূজা করা হয়। এই অঞ্চলের প্রাচীন নাম ছিল কেদারখণ্ড ; তাই এখানে শিবকে কেদারনাথ (অর্থাৎ, কেদারখণ্ডের অধিপতি) নামে পূজা করা হয়।

৬. ভীমশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গ-

মহারাষ্ট্রে অবস্থিত অন্যতম উল্লেখযোগ্য শিবলিঙ্গ মন্দির এটি।ভীমশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গ ঠিক কোথায় তা নিয়ে বিতর্ক আছে। মহারাষ্ট্রের পুনের কাছে একটি ভীমাশঙ্কর মন্দির রয়েছে । এই অঞ্চলটি প্রাচীনকালে ডাকিনী দেশ নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু উত্তরাখণ্ডের কাশীপুরও প্রাচীনকালে ডাকিনী দেশ নামে পরিচিত ছিল। এখানে মোটেশ্বর মহাদেব নামে একটি ভীমশঙ্কর মন্দির আছে। ভীমশঙ্কর মন্দিরের অন্যান্য দাবিদার মন্দিরগুলি  হল মহারাষ্ট্রের সহ্যাদ্রি, অসমের গুয়াহাটির কাছে ও ওড়িশার গুনুপুরে অবস্থিত।গ্রহের বাঁধা কাটানো ও অকাল মৃত্যু রোধ করার অসংখ্য ভক্ত আসেন এখানে।জঙ্গলের মধ্যে ঘন গ্রানাইট পাথরের তৈরি এই মন্দির।এই মন্দিরের লিঙ্গ মাঝারি  আকারের।

৭. কাশী বিশ্বনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ-

উত্তরপ্রদেশের কাশীতে অবস্থিত  অন্যতম জনপ্রিয় জ্যোতির্লিঙ্গ হল বিশ্বনাথ শিবলিঙ্গ।মন্দিরটি শৈবধর্মের প্রধান কেন্দ্রগুলির অন্যতম। অতীতে বহুবার এই মন্দিরটি বিভিন্ন আক্রমণে  ধ্বংসপ্রাপ্ত ও পুনর্নির্মিত হয়েছে। মন্দিরের পাশে জ্ঞানবাপী মসজিদ নামে একটি মসজিদ রয়েছে। আদি মন্দিরটি এই মসজিদের জায়গাটিতেই অবস্থিত ছিল।বর্তমান মন্দিরটি ১৭৮০ সালে  ইন্ডোরের মহারানি  অহল্যা বাই হোলকর তৈরি করে দেন।মন্দিরের প্রধান দেবতা শিব।এখানে “বিশ্বনাথ” বা “বিশ্বেশ্বর” নামে পূজিত হয়। বারাণসী শহরের অপর নাম “কাশী” এই কারণে মন্দিরটি “কাশী বিশ্বনাথ মন্দির” নামে পরিচিত। মন্দিরের ১৫.৫ মিটার উঁচু চূড়াটি সোনায় মোড়া। তাই মন্দিরটিকে স্বর্ণমন্দিরও বলা হয়ে থাকে। ১৯৮৩ সাল থেকে উত্তরপ্রদেশ সরকার এই মন্দিরটি পরিচালনা করে আসছেন।হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, গঙ্গায় একটি ডুব দিয়ে এই মন্দির দর্শন করলে মোক্ষ লাভ করা সম্ভব।

৮. ত্র্যম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ-

মহারাষ্ট্রের নাসিকের কাছে গোদাবরী  নদীর উৎসের কাছে অবস্থিত এই জ্যোতির্লিঙ্গ অন্যতম জনপ্রিয় ।এই লিঙ্গমূর্তি তিন ভাগে বিভক্ত এবং অন্য শিবলিঙ্গের চেয়ে আলাদা৷এই মন্দিরের পুননির্মাণ নানাসাহেব ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে করেন।তখন এই মন্দির নির্মাণ করতে খরচ হয়েছিল সেইসময়কার ১৬ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছিল।যা তখনকার হিসেবে অনেক অনেক টাকা।

৯. বৈদনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ-

এই মন্দিরটি  ঝাড়খন্ড রাজ্যের দেওঘর জেলায় দেওঘর শহরে অবস্থিত। অবস্থিত এই মন্দির  খুবই প্রসিদ্ধ।অসংখ্য পুণ্যার্থী সারা বছর ধরেই এখানে আসেন, শিবলিঙ্গে জল ঢালেন ও পূজা দেন।শ্রাবন মাসে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়।বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের অবস্থানও বিতর্কিত। ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের বৈদ্যনাথ মন্দিরটি জ্যোতির্লিঙ্গ আখ্যাপ্রাপ্ত। এটিই একমাত্র তীর্থ যা একাধারে জ্যোতির্লিঙ্গ ও শক্তিপীঠ। বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যান্য দাবিদার মন্দিরগুলি হল হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলার বৈজনাথ শিবধাম ।মহারাষ্ট্রের বিড জেলার পারলি বৈজনাথ।

১০. নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ-

এই জ্যোতির্লিঙ্গের অবস্থানও বিতর্কিত। জ্যোতির্লিঙ্গ দাবিদার মন্দিরগুলি হল উত্তরাখণ্ডের আলমোড়ার কাছে জাগেশ্বর মন্দির।গুজরাতের দ্বারকায় অবস্থিত মন্দির। ও অনেকের মতে এই মন্দির মহারাষ্ট্রের হিঙ্গোলি জেলার অন্ধ নাগনাথে অবস্থিত।তবে সবচেয়ে বেশি লোক মনে করে নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ ভারতের গুজরাট রাজ্যে অবস্থিত।   আর এই মন্দির হিন্দুদের এক অন্যতম ধর্মীয় পীঠস্থান। গুজরাটের জামনগরে অবস্থিত এই মন্দিরের শিবলিঙ্গকে বিশেষ মান্যতা দেওয়া হয়েছে।সমগ্র ভারতের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত দ্বাদশ জ্যোতির্লিংগের অন্যতম বলে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন পৌরাণিক আখ্যানে এই মন্দির ঐতিহাসিক কাল থেকে ভক্তদের জন্য আকর্ষণের স্থল হয়ে আসছে। শিব উপাসকরা নাগেশ্বর মন্দিরের জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন পরম পবিত্র বলে গণ্য করে।

১১. রামেশ্বরম জ্যোতির্লিঙ্গ-

তামিলনাড়ুর রামেশ্বরে অবস্থিত এই  রামেশ্বরম জ্যোতির্লিঙ্গ চারধামের মধ্যে অন্যতম ধাম।একে দক্ষিণ ভারতের কাশীও বলা হয়।দক্ষিণ-পূর্ব ভারতের শেষ প্রান্তভূমি পক প্রণালীতে একটি দ্বীপের আকারে গড়ে উঠেছে রামেশ্বরম। রামেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গটি বিশাল। এই মন্দিরে রামেশ্বর স্তম্ভ অবস্থিত।সারা বছর ধরেই অসংখ্য পুণ্যার্থী এখানে পূজা দিতে আসে।

১২. ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ-

এটি ১২টি  জ্যোতির্লিঙ্গ এর মধ্যে শেষ জ্যোতির্লিঙ্গ।এই মন্দির এটি মহারাষ্ট্র  রাজ্যের আওরাঙ্গাবাদ থেকে ৩০ কিলোমিটার  দূরে এবং দৌলতাবাদ বা দেবগিরি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে  ইলোরা গুহার কাছে অবস্থিত।মন্দিরটি লাল পাথর দিয়ে তৈরি। এতে পাঁচটি চূড়া দেখা যায়। এখনকার মন্দিরটি অষ্টাদশ শতাব্দীতে তৈরি। এর গায়ে অনেক হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি খোদিত আছে।


হর হর মহাদেব।

No comments

Powered by Blogger.